নাসার টেস স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ

টেস (TESS = Transiting Exoplanet Survey Satellite) হল নাসার বহির্জাগতিক গ্রহ অনুসন্ধানকারী একটি স্পেস টেলিস্কোপ যা ভারতীয় সময় অনুসারে ১৭ এপ্রিল ভোররাত ৩:৩০ নাগাদ উৎক্ষেপণ করা হবে। এই টেলিস্কোপের প্রধান উদ্দেশ্য হল সূর্যের নিকটস্থ ২,০০,০০০ নক্ষত্রের গ্রহগুলি আবিষ্কার ও সম্ভাব্য প্রাণ ধারনে সক্ষম গ্রহের সন্ধান করা ! মূলত মাল্টিবিলিয়ন ডলারের জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম দিকের সন্ধান কার্য ঠিক করা হবে এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে। গত ১৫ মার্চে টেলিস্কোপটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে এটিকে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। আগামীকাল ১৭ এপ্রিল ভারতীয় সময় ভোররাত ৩.৩০ টায় ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল বিমানঘাটি থেকে স্পেস এক্সের ফ্যাল্কন-৯ হেভি রকেটে করে এটিকে মহাশূন্যে পাঠানো হবে। এই টেলিস্কোপ অভিযানের প্রাথমিক মেয়াদকাল ২ বছর। এটি পৃথিবীর আকাশকে ২৬ টি ব্লকে ভাগ করে অনুসন্ধান কাজ চালাবে।

প্রতি ২৭ দিনে নতুন একটি করে ব্লকে অনুসন্ধান করবে অর্থাৎ বছরে ১৩ টি ব্লক। একেকটি ব্লক ২৪ থেকে ৯৬ ডিগ্রির মধ্যে। তবে এই ডিগ্রি কিন্তু আমাদের প্রচলিত কৌণিক পরিমাপের ডিগ্রির মত না। আমরা খ-গোলক বা Celestial Sphere সম্পর্কে অনেকেই জানি। পুরো আকাশ হল মোট ৩৬০ ডিগ্রি, কিন্তু যে কোনো সময় আমাদের মাথার উপর শুধু ১৮০ ডিগ্রি থাকে, বাকিটা থাকে পৃথিবীর উল্টো পাশে। আর এখানে ডিগ্রির হিসাব হল এই ১৮০ ডিগ্রির মধ্যে কোন বস্তু কতটুকু জায়গা দখল করেছে তা। এটা পূর্ব-পশ্চিমেও হিসাব করা যায়, আবার উত্তর- দক্ষিণ বা অন্য কোনো দিকের ভিত্তিতেও হিসাব করা যায়। আমাদের হাতকে লম্বা করে সামনে বাড়িয়ে দিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করে আকাশের দিকে ধরলে এক মুষ্ঠির পরিমাণ হয় ১০ ডিগ্রি। আবার একইভাবে হাত বাড়িয়ে ধরে বৃদ্ধ ও কনিষ্ঠ আঙ্গুলকে প্রসারিত করে ধরলে দুই আঙ্গুলের অগ্রভাগের মধ্যবর্তী দুরত্ব হল ২৫ ডিগ্রি। আবার মেটালহর্ন অর্থাৎ ইনডেক্স ফিঙ্গার বা তর্জনী ও কনিষ্ঠ আঙ্গুলের মধ্যবর্তী দুরত্ব হল ১৫ ডিগ্রি। পূর্ণচন্দ্র আকাশে মাত্র ১/২ ডিগ্রি অঞ্চল জুড়ে থাকে।

টেলিস্কোপটি প্রতিটি তারাকে ২ মিনিট ধরে ট্রানজিট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে।
একটি গ্রহ তার মাতৃতারার চারদিকে প্রদক্ষিণ করে। প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে কোনও না কোনও সময় পৃথিবীর সাপেক্ষে গ্রহটি তার মাতৃতারার ঠিক সামনে দিয়ে অতিক্রম করে। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে দেখা যায় যে একটি তারার সামনে দিয়ে একটি গ্রহ যাচ্ছে। গ্রহটি তারা থেকে পৃথিবীতে আসা আলোর কিছু অংশ আটকে দেয়, ফলে নক্ষত্র থেকে আসা আলোর কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। যার ফলে পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখলে গ্রহটির অস্তিত্ব শনাক্ত করা যায়। অর্থাৎ, একটি গ্রহ তার মাতৃতারার চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে কোনও না কোনও সময় পৃথিবীর সাপেক্ষে গ্রহটি তার মাতৃতারার ঠিক সামনে দিয়ে অতিক্রম করে।এতে আমরা নক্ষত্রের উজ্জ্বলতার সামান্য পার্থক্য দেখব। আর টেলিস্কোপটির ফোটোমিটার এই উজ্জ্বলতা হ্রাসবৃদ্ধির তথ্য জোগাড় করবে। আর পৃথিবীতে বিজ্ঞানীরা তা বিশ্লেষণ করবেন।

মূলত Spectroscopy বা বর্ণালীবিক্ষনের মাধ্যমে ও গ্রহটি তার মাতৃতারার কতটুকু আলো ব্লক করছে বা আসতে বাধা প্রদান করছে তার উপর ভিত্তি করে জ্যোতিঃপদার্থবিদেরা গ্রহটির আকার, ভর, নক্ষত্র থেকে অবস্থান, বায়ুমন্ডলের গঠন, জলীয়বাস্পের উপস্থিতি বা গোল্ডিলক জোনে আছে কিনা তা সম্পর্কে তথ্য পাবেন। বিগত কেপলার ও কে-২ মিশনে নাসা প্রাণ উপস্থানের জন্য বেশি সম্ভাবনার অনুজ্জ্বল তারা (লোহিত বামন) বেছে নিয়েছিল। তবে TESS টেলিস্কোপটি সেসব নক্ষত্রের চাইতে ৩০ থেকে ১০০ গুন উজ্জ্বলতা সম্পন্ন নক্ষত্রে সন্ধান চালাবে। এই প্রসঙ্গে নাসার অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ডিভিশনের পরিচালক পল হার্জ বলেন, “বিগত কেপলার মিশনের মাধ্যমে আমরা শিখেছি যে আকাশে তারার চাইতে গ্রহের সংখ্যা ঢের বেশি, তাই অধিক উজ্জ্বলতা সম্পন্ন নক্ষত্রদের এই মিশনে পরীক্ষা করা হবে।”

নাসা গোডার্ড এই মিশনটি পরিচালনা করবে। টেলিস্কোপটি এমআইটিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। ৭৮ মিলিয়ন ডলারের এই টেলিস্কোপটি প্রতি ১৩.৫ দিনে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে। এই টেলিস্কোপটির প্রথম প্রস্তাব করে গুগল। ২০১০ সালে গুগল এর ব্যয়ভারের দায়িত্ব নেয়। ২০১৩ সালে এমআইটির ডিজাইন নাসার এক্সোপ্লানেট সার্ভে টিমকে সন্তুষ্ট করতে পারার পরে এর নির্মান কাজ শুরু হয়। ৩০০ আলোকবর্ষ সীমার মধ্যবর্তী নক্ষত্রগুলিকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে TESS জ্যোতির্বিদ্যায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানীদের দৃঢ় বিশ্বাস।

তথ্যসূত্রঃ- জ্যোতির্বিদ্যা ও সৃষ্টিতত্ত্ব
-অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র।।

আরও দেখুন “মৃত্যু লালগড়ের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের, ক্ষতিগ্রস্ত হলো বাস্তুতন্ত্র”

Content Protection by DMCA.com
এখান থেকে শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
error: মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত