নেদারল্যান্ডসে শতাধিক পাখি মৃত্যুর আসল কারণ কি 5G নেটওয়ার্ক পরীক্ষা?

নেদারল্যান্ডসে শতাধিক পাখি মৃত্যুর আসল কারণ কি 5G নেটওয়ার্ক পরীক্ষা? – আসুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

গত কয়েক সপ্তাহ আগে, সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ভাইরাল ম্যাসেজ দাবি করে যে তিনশোর বেশি পাখি 5G নেটওয়ার্কের শিকার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগ এ। খবরটি প্রথম দেখা যায় এরিন এলিজাবেথ নামক এক নারীর হেলথ নাট নিউজ নামক ওয়েবসাইটে। 5G নেটওয়ার্ক বিরোধী জন কুহল্‌স নামক একজন ব্যক্তির ফেসবুক নোটের উপর ভিত্তি করে নিজের ওয়েবসাইটে লেখাটি দিয়েছিলেন এরিন এলিজাবেথ।

5G Network and Birds

এরপর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলিও প্রতিবেদনটি শেয়ার করে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে যার মধ্যে Zee News , Zee 24, News 18 এবং অন্যান্য নামীদামী সংবাদমাধ্যম।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলিতে দাবী করা হয়, নেদারল্যান্ডসের 5G নেটওয়ার্ক পরীক্ষা শতাধিক পাখির মৃত্যুর কারণ।

তবে, সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্তিকর। নেদারল্যান্ডসে পাখিদের মৃত্যু কোনো ভাবেই 5G নেটওয়ার্কের পরীক্ষার কারণে হয়নি।

5G Network and Birds

প্রকৃতপক্ষে, সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত রজনীকান্ত ও অক্ষয় কুমার অভিনীত 2.0 যা ম্যাসেজটি ভাইরাল হওয়ার একটি ভূমিকায় আছে। ছবির একটি সাব প্লট পাখি এবং মৌমাছিদের উপর মোবাইল নেটওয়ার্ক বিকিরণগুলির খারাপ প্রভাবের উপর। 2.0 সিনেমাতে পাখিদের মৃত্যুর ব্যাপারে যা দেখানো হয়েছে তা একদম ভিত্তিহীন, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

♦কিন্তু নেদারল্যান্ডসে শতাধিক পাখিদের মৃত্যুর কারণ কি?

এই বছর 19শে অক্টোবর থেকে 23শে নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক মাস সময়কালে হেগের হাইগেন্সপার্কে 337টি পাখি মারা যায়। অনুসন্ধান থেকে দেখা যায়, কোনো রকম ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন কিংবা ইঁদুরের বিষ পাখিগুলোর মৃত্যুর জন্য দায়ী না। একইভাবে, পাখিগুলোর মৃত্যুর সময় 5G সংক্রান্ত কোনো রকম পরীক্ষণও চালানো হচ্ছিলো না।

পরবর্তীতে পৌরসভার অনুরোধে ওয়াজেনিঞ্জেন বায়োভেটেরিনারি রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের গবেষণা থেকে ইয়ু গাছ থেকে উদ্ভুত বিষাক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে পাখিগুলোর দেহে। অবশ্য এই গাছের ফল পাখিরা প্রায়ই খেয়ে থাকে, যা থেকে আগে তাদের মৃত্যুর ঘটনা কখনো জানা যায়নি। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণা করছে।

Image: ইয়ু গাছ ও ফল, Source: The Woodland Trust

নভেম্বরের 12 তারিখে পাওয়া সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, দেশটির ফুড এন্ড কনজ্যুমার প্রোডাক্ট সেফটি অথোরিটি ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস এবং উসুটু (Usutu) ভাইরাসের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাননি। তবে এর মানে এই না যে, এর পেছনে অন্য কোনো ভাইরাস বা কোনোকিছুর বিষক্রিয়া জড়িত নেই। বিষয়টি নিয়ে আরো তদন্তে নেমেছে ডাচ ওয়াইল্ডলাইফ হেলথ সেন্টার, ইরাসমাস ইউনিভার্সিটি (রটারড্যাম) এবং গেন্ট ইউনিভার্সিটি।

♦তাহলে সত্যিই কি নেদারল্যান্ডসে 5G নেটওয়ার্ক পরীক্ষা হয়েছিলো?

হ্যাঁ, নেদারল্যান্ডসে 5G নেটওয়ার্ক পরীক্ষা হয়েছিলো। তবে তা হয়েছিলো পাখিগুলোর মারা যাওয়ার কয়েকমাস আগে, এ বছরের 28শে জুন। আর সেই সময় পাখি মারা যাওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। হুয়াওয়ের এ গবেষণাটি সি-ব্যাণ্ডে 3.5 গিগাহার্জে পরিচালনা করা হয়েছিলো। যেহেতু নেদারল্যান্ডের মোবাইল সার্ভিসগুলোর জন্য এই তরঙ্গ ব্যবহারের অনুমতি এখনও মেলেনি, তাই মাত্র একদিনের জন্য হুয়াওয়েকে এই পরীক্ষা চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছিল ভুরবার্গ এলাকায়। এর আগে হেগে কখনো 5G পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে জানা যায় না। যে হাইগেন্সপার্কে পাখি মারা যাওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে, গুগল ম্যাপ অনুযায়ী সেখান থেকে ভুরবার্গের দূরত্ব 4 কিলোমিটার।

হুয়াওয়ে তাদের এ পরীক্ষাটি চালিয়েছিল ডাচ ল্যান্ডলাইন ও মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি কেপিএন এর অফিস থেকে। কেপিএন এর একজন প্রতিনিধিও পরবর্তী সময়ে পাখি মারা যাবার এ খবরটিকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।

♦পাখি মারা যাওয়া, 5G নেটওয়ার্কের পরীক্ষণ- সবকিছু নিয়েই ধোঁয়াশা তো কাটলো। কিন্তু শেষপর্যন্ত একটি প্রশ্ন থেকেই যায়। 5G প্রযুক্তি কি আসলেই এমন কিছু করতে সক্ষম?

না। অন্তত এতে যে তরঙ্গ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার দ্বারা এটা সম্ভব না কোনোভাবেই। ইউরোপে 5G তিনটি ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামে থাকছে- ১) কভারেজ লেয়ার: ৭০০ মেগাহার্জ, ২) প্রাইমারি ব্যান্ডউইডথ: ৩.৪-৩.৮ গিগাহার্জ এবং ৩) সুপার ডাটা লেয়ার: ২৪.২৫-২৭.৫ গিগাহার্জ। এর মাঝে ২য় শ্রেণীটিই ব্যবহার করেছিল হুয়াওয়ে। তবে এই ৩ শ্রেণীর প্রতিটিই যে নিরাপদ, সেই ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করছে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন প্রোটেকশন (আইসিএনআইআরপি)।

নেদারল্যান্ডের হেলথ কাউন্সিলের সদস্য এবং আইসিএনআইআরপি’র সভাপতি ড. এরিক ভ্যান রনজেনও 5G -র তরঙ্গকে নিরাপদ বলেই জানিয়েছেন। তার মতে, মোবাইল নেটওয়ার্কের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড দিয়ে পাখির মৃত্যুর জন্য দরকার বেশ উচ্চ তাপের, যা পাখিটি অনেক বেশি মাত্রার রেডিয়েশনের সম্মুখীন হলেই কেবল সম্ভব। কিন্তু মোবাইল নেটওয়ার্কের অ্যান্টেনাগুলোতে যে মাত্রার তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়, তা দিয়ে এমনটা হওয়া সম্ভব নয়। বিশ্বজুড়ে মোবাইল নেটওয়ার্কের অ্যান্টেনা আছে অগণিত, কিন্তু এর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড পাখির মৃত্যুর কারণ হয়েছে, এমনটা শোনা যায়নি কখনোই।

♦তথ্যসূত্রঃ

1. Snopes

2. Roar Bangla Media

Content Protection by DMCA.com
এখান থেকে শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
error: মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত