বর্তমান সময় এবং বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা

‘পৃথিবী’ ‘পরিবেশ’ ‘জল’ এবং  ‘জলবায়ু’ এই শব্দগুলো যেন একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। মানুষের একমাত্র আবাসস্থল হল এই পৃথিবী তথা বসুন্ধরা। জল সম্পদ, অরণ্য সম্পদ, এবং অন্যান্য পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই পৃথিবী। তবে আমাদের প্রত্যক্ষ, অপ্রত্যক্ষ কারণে প্রাকৃতিক সম্পদ গুলো সংকটের দিকে এগোচ্ছে না তো!! ইতিমধ্যেই জল সম্পদ জল সংকটের আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। তথ্য বলছে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ একফোঁটা পানীয় জলের জন্য হাহাকার করবে। ২০৫০ সাল নাগাদ ভয়াবহ জল সংকটে পড়তে চলেছে গোটা দেশই। অরণ্য সম্পদ যথেচ্ছ ভাবে নিধনে মানুষ মেতে উঠেছে। শহরাঞ্চলগুলোতে যত্রতত্র জলাভূমি বুজিয়ে ‘ নগরায়ন’ নামক মহৎ কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের দাপটে তীব্র দাবদাহের জ্বালা আমরা বর্তমানে প্রতিদিন ভালোভাবেই টের পাচ্ছি। বিভিন্ন প্রকারের দূষণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। গ্রামাঞ্চলের কৃষি জমিগুলো জলের অভাবে রীতিমতো ধুঁকছে। ভৌম জলস্তর ক্রমাগত নামছে। আগামীতে ঠিক উক্ত কারণ গুলোর জন্যই এক তীব্র জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছি আমরা। তার ট্রেলার কিন্তু ইতিমধ্যেই জলবায়ু দেখাতে শুরু করেছে। আর এমতাবস্থায় বর্তমান সময়ে বিশ্ব বসুন্ধরা বা ধরিত্রী দিবস উদযাপন!! সবকিছু জেনে বুঝেও বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসের প্রাসঙ্গিকতা তথা গুরুত্বকে অপ্রাসঙ্গিক আমরা নিজেরাই কি করে তুলছি না!!! একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ভোট দান করবার ব্যাপারে যতটা সচেতন এবং দায়িত্বশীল, সবুজ পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে ততটাই উদাসীন কেনো!!! এটা একটা ভাববার বিষয় নয় কি!!

বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস
বিশ্ব বসুন্ধরা দিবস 2023

যাই হোক, প্রসঙ্গত এবারের বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসের থিম হলো ‘Invest in our Planet’ । জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গোটা বিশ্ব এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত। মূলত প্রকৃতি, পরিবেশ এবং জলবায়ু সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যই এই দিনটি পালন করা হয়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গেলোর্ড নেলসন ১৯৭০ সালের ২২ শে এপ্রিল এই দিনটির প্রথম প্রচলন করেন। সমগ্র বিশ্বের প্রায় ১৯৩ টি দেশে বসুন্ধরা দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে। ২০২৩ সালের বসুন্ধরা দিবস পাঁচটি প্রধান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উদযাপিত হচ্ছে। সেগুলি হল sustainable fashion,Great global cleanup, Canopy project, Climate & Environmental literacy,Food environment & global earth challenge । এইসব বিষয় নিয়েই কথা হচ্ছিল পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার শোভা নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ড: হরিস্বামী দাসের  সাথে।তিনি এই প্রসঙ্গে জানান, ” পরিবেশের ভারসাম্য ততক্ষণই ঠিক থাকবে, যতক্ষণ পরিবেশ সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়গুলো সুশৃংখলভাবে গতিশীল থাকবে, তবে এই শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় আমাদের কারণেই। আমাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ, ভালো থাকা, ভালো রাখা প্রকৃতি বিষয়গুলো দেখতে গিয়ে পরিবেশের ওপর আমাদের আঘাত হানতেই হয়। বাসযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ছে, কৃষি জমি কমছে, বন ধ্বংস হচ্ছে, জলাশয় বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে,নদী নালা ইত্যাদিও আজ অস্তিত্ব সংকটের মুখে। ফলে সমস্ত দিক থেকে আমরা পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছি। অর্থাৎ আমরা যদি পরিবেশ সম্পর্কে প্রকৃত সচেতন না হই, মানুষ যতদিন না পরিবেশের সমস্ত উপাদান যেমন গাছ, জল, মৃত্তিকা এগুলোকে মন থেকে সম্মান না করলে ধরিত্রী দিবস পালনের সঠিক যৌক্তিকতা থাকবে না। মানুষ আশাবাদী। এগুলোর থেকে বেরিয়ে আসার উপায় মানুষকেই খুঁজতে হবে।” অপরদিকে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিষয়ের  বরিস্থ অধ্যাপক ড: মধুসূদন কর্মকার জানান, ” বর্তমান সময়ে সর্বত্র বিপুল হারে বৃক্ষ ছেদন প্রক্রিয়া চলছে। ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন তীব্রভাবে প্রকট হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সকলেরই উচিত বৃক্ষরোপনের দিকে জোর দেওয়া। সুন্দরবনকে পশ্চিমবঙ্গের ফুসফুস বলা হয়ে থাকে। সেই সুন্দর বনেও প্রচুর পরিমাণে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস হচ্ছে। ঘোড়ামারা, মৌসু নি আইল্যান্ড গুলো পূর্বের তুলনায় অনেকটা বসে গেছে। তবে সুন্দর বনে পূর্বাশা ইকো ট্যুরিজম তথা আরো কিছু এন জি ও বেসরকারি স্তরে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপনে যেভাবে এগিয়ে এসেছে সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। বৃক্ষ রোপনে সুন্দরবনে স্থিত এসব এন জি ও গুলোর মুল ধারণা সমগ্র দেশ তথা রাজ্যে রূপায়িত হলে ধরিত্রী দিবসের Invest in our Planet থিমটি প্রকৃত অর্থেই সফলতা পাবে”। অন্যদিকে Earthday Organizer এর প্রেসিডেন্ট ক্যথলিন রগারস সরকারি, বেসরকারি স্তর এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৃহত্তর সমাজকে বিশ্ব জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যকর, সমৃদ্ধশালী, পরিবেশবান্ধব, সবুজায়ন যুক্ত পরিবেশ উপহার দেওয়ার কথাই বলেছেন। সুতরাং বর্তমানে তীব্র উষ্ণায়নের হা হুতাশ থেকে রক্ষা পেতে এবং আমাদের বসুন্ধরা কে আগামী কয়েক প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত রাখতে সচেতন, সজাগ, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে যা যা করণীয় আমরা সকলেই সেগুলো আশা করি অনুসরণ করবো,একথা হরফ করে বলায় যায়।


সজল মজুমদার, শিক্ষক এবং প্রাবন্ধিক ,বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

 

©Mission Geography India

Content Protection by DMCA.com
এখান থেকে শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
error: মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত