ফুরিয়ে আসছে ভূগর্ভস্থ জল, দেশের ৬০ কোটি মানুষ তীব্র জল সংকটে
চেন্নাই দিয়ে শুরু! ২০২০ সালের মধ্যে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং হায়দ্রাবাদ সহ ভারতের ২১টি শহরের ভূগর্ভস্থ জল ফুরিয়ে যাবে। ২০২২ সালে এই তালিকায় আরও শহর যুক্ত হবে, ২০২৫ সালে সংখ্যাটি আরও আরও বাড়বে – বলছে নীতি আয়োগ। নীতি আয়োগের রিপোর্ট বলছে, বর্তমানে ভারতের ৬০ কোটি মানুষ মৃদু থেকে তীব্র জল সংকটে ভুগছেন। তথ্য বলছে, ভারতে প্রতি বছর প্রায় দু’লক্ষ মানুষ শুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে মারা যান।
দেশের জলের চাহিদার ৪০ শতাংশ মেটায় ভূগর্ভস্থ জল। বিশ্বের মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি ভূগর্ভস্থ জল তোলা হয়। এর ফলে ২০২০ সালের মধ্যে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং হায়দ্রাবাদ সহ ২১টি শহরের ভূগর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাবে। যার জেরে চরম বিপাকে পড়বেন ভারতের ১০ কোটি মানুষ। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ এক ফোঁটা পানীয় জলের জন্য হাহাকার করবেন। ২০৫০ সাল নাগাদ ভয়াবহ জলসঙ্কটে পড়তে চলেছে গোটা দেশই। ইতিমধ্যেই চেন্নাইয়ে তিনটি নদী, চারটি জলাশয়, পাঁচটি জলাভূমি এবং ছ’টি জঙ্গল সম্পূর্ণ শুকিয়ে গিয়েছে।
ভালো বর্ষা এই পরিস্থিতিতে সামান্য একটু স্বস্তি দিতে পারত। কিন্তু এবার দেশের ৫৫ শতাংশ এলাকাতেই খরার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমী বায়ু দুর্বল, কোথাও স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়নি। এই মরশুমে বৃষ্টি কম প্রায় ৩৯ শতাংশ। কিন্তু মূল চিন্তা সেই ভূগর্ভস্থ জল নিয়েই। Water Authority of India -র তথ্য বলছে, দেশের গড় জলস্তর ৩০ এমডবলিউটিইউয়ের কম। স্বাভাবিক ভাবে জলস্তর ৭৫ ইউনিটের ওপরে থাকার কথা।
ন্যাশানাল ওয়াটার অ্যাকাডেমির অধ্যাপক মনোহর খুশালানি বলেন, ‘‘চেন্নাইয়ে ডিস্যালাইনেশন (লবণাক্ত জল থেকে নুন বার করে পানীয় জলের উপযোগী করা) করা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু সেই পদ্ধতি খুবই খরচসাপেক্ষ। এ ভাবে চললে সমুদ্রের জলও এক দিন ফুরবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টাকা থাকবে, জল নয়। টাকা খেয়ে কি পিপাসা মিটবে! এটা কোনও সমাধান নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকার এবং সাধারণ মানুষ – দু তরফেরই দায়িত্ব জল সংরক্ষণ করার। জল সংরক্ষণ করে ভূগর্ভস্থ জলস্তর বাড়ানো দ্রুত প্রয়োজন।’’
রাষ্ট্রমন্ত্রী রামনাথ কোবিন্দ বক্তৃতায় বলেন, ‘‘একুশ শতকের সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জলসঙ্কট। এক সময়ে জল সংরক্ষণের জন্য যা যা করা হতো, সে সব কিছুই এখন মেনে চলা হয় না। জলাভূমি বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ নিয়ে যতটা গুরুত্ব দেখানো হচ্ছে, জলসংরক্ষণ নিয়েও ততটাই জোর দেওয়া উচিত সরকারের।’’ এ প্রসঙ্গে ভারত সরকারের প্রশংসাও করেছেন কোবিন্দ। জানিয়েছেন, নতুন ‘জলশক্তি মন্ত্রক’ তৈরি করা কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম সদর্থক পদক্ষেপ।
জলের অভাব মানেই স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা আর চাষের কাজে সংকট। আর তাই চিন্তা আরও বেশি। বিজ্ঞানীর আপশোস তা পরিনতির আঁচ অনেকদিন আগেই মিলেছিলো। টাকা দিয়ে জল তৈরি করা যাবে না, – এটা জেনেও না মানুষ না সরকার কেউই সতর্ক হয়নি। জলসংকট মোকাবিলায় ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দিতে নল দিয়ে জল প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো মোদী সরকার। নদী-নালা, খাল-বিল সবই শুকিয়ে গিয়েছে, তা থেকে জল নিয়ে পৌঁছবে কীভাবে? দেওয়াল লিখন এখনই স্পষ্ট। সংকট থেকে রাতারাতি বাঁচার উপায় দেখছেন না পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীমহল।
-মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া।
♦তথ্যসূত্রঃ নিউজ ১৮ বাংলা, আনন্দবাজার পত্রিকা, জি নিউজ।