সমুদ্রের নিচে তৈরি হচ্ছে ‘প্রোটিয়াস’
মহাকাশে ভাসমান স্পেস স্টেশন আমাদের কাছে পরিচিত বিষয়। তবে সমুদ্রের গভীরে গবেষনার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক পরিকল্পনা কল্পনাতীত, যা ইতিমধ্যে বাস্তবে রূপান্তরিত হতে চলেছে। পৃথিবীর প্রায় ৭১% এলাকা জলভাগ তথা সমুদ্রের অন্তর্গত, আর NOAA-এর মতে মানুষ সেই সুবিশাল এলাকার মাত্র ৫% এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়েছে এবং পৃথিবীর সামুদ্রিক অঞ্চলের মাত্র ২০%-এর মানচিত্রায়ন করা হয়েছে। সুতরাং, এ থেকে সহজেই অনুমেয়, সুবিশাল মহাসাগরীয় অঞ্চলে কত-শত বিচিত্র জীব প্রজাতি রয়েছে, যা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
সাম্প্রতিকতম গবেষণা ক্ষেত্রের এই দৃশ্যপটে বদল আনতে প্রখ্যাত সংরক্ষণবিদ অ্যাকোয়ানট ফ্যাবিয়েন কোস্টিউ এবং ডিজাইন ফার্ম ফিউজ প্রজেক্টরের শিল্প ডিজাইনার ইভেস বেহার সমুদ্রের নিচে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের আদলে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ডুবো বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্র তৈরির কল্পনা করেছেন।
নেদারল্যান্ডের অন্তর্গত কুরাকো দ্বীপের উপকূলে ক্যারিবিয়ান সাগরের তলদেশে ১৮ মিটার বা প্রায় ৬০ ফুট গভীরে এবং ৪০০০ বর্গফুট জায়গা জুড়ে তৈরি হবে এই ‘প্রোটিয়াস’ নামক গবেষণা কেন্দ্রটি। জলের নীচে এই পরীক্ষাগারে বিজ্ঞানীরা কয়েক মাস ধরে সমুদ্র সংক্রান্ত গবেষণা চালিয়ে যেতে পারবেন।
অতীতে তৈরি সাবমেরিন আবাসগুলির তুলনায় এটি চার গুণ বড় হবে এবং এখানে একসঙ্গে বারো জন সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী ও গবেষক থাকতে পারবেন। একটি কেন্দ্রের চারপাশে ঘুর্ণয়মান এমন আকৃতিবিশিষ্ট গবেষণা কেন্দ্রটি সমুদ্রের তলদেশে পায়ার ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে। এছাড়াও একসঙ্গে কয়েকটি ল্যাব, স্লিপিং কোয়াটার, বাথরুম, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, লাইভ সাপোর্ট সিস্টেম এবং স্টোরেজ সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে ও একাধিক মুলার পড থাকবে, যেখানে সাবমেরিন জাতীয় বাহনগুলি নোঙর করতে পারবে।
সম্পূর্ণরূপে বায়ু, সৌরশক্তি এবং মহাসাগরীয় তাপশক্তি রূপান্তরের মাধ্যমে চালিত ‘প্রোটিয়াস’ স্টেশনটিকে পৃথিবীর প্রথম ডুবো গ্রিনহাউস বলা হচ্ছে, যেখানে কর্মরত গবেষকদের জন্য উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্যও উৎপাদন করা সম্ভব হবে এবং পাশাপাশি ভিডিও তৈরি, পরীক্ষাগার ও চিকিৎসার সুবিধা থাকবে। পৃথিবী ও মানবতার কল্যাণে প্রোটিয়াস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সরকারী সংস্থাগুলির বিজ্ঞানের অগ্রগতির মাধ্যমে বৈশ্বিক সহযোগিতার একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জেরে প্রকল্পটির কাজ সম্পূর্ণ হতে দেরি হচ্ছে। বৈজ্ঞানিকদের মত অনুযায়ী যা সম্পূর্ণরূপে স্থাপিত হতে এখনও ৩ বছর সময় লাগবে।
লেখিকাঃ- দেবমিতা বণিক (গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান)
[লেখিকা পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের ভূগোল স্নাতক বিভাগের ছাত্রী]
তথ্যসূত্রঃ- CNN ; Time Out ; Eco Watch ; Business Insider ; Dezeen
প্রথম প্রকাশঃ- ভূগোলিকা ফেসবুক পেজ, চতুর্থ বর্ষপূর্তি-৩০/০৩/২০২১
©ভূগোলিকা-Bhugolika
©মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া