জল সঞ্চয়ন – গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল পদ্ধতি

সম্প্রতি নীতি আয়োগের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এবং হায়দ্রাবাদ সহ ২১টি শহরের ভূগর্ভস্থ জল শেষ হয়ে যাবে। যার জেরে চরম বিপাকে পড়বেন ভারতের ১০ কোটি মানুষ। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতীয় জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ এক ফোঁটা পানীয় জলের জন্য হাহাকার করবেন। ২০৫০ সাল নাগাদ ভয়াবহ জলসঙ্কটে পড়তে চলেছে গোটা দেশই। কিন্তু এই তীব্র জল সংকট থেকে বাঁচার উপায় কি? কিভাবেই বা আমরা ভৌম জলস্তরকে সঞ্চয়ন করতে পারবো? এই বিষয়ে আলোকপাত করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের Irrigation & Waterways Department -এর Assistant Engineer আশুতোষ দত্ত

গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল
গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল

ছবিগুলি ভাল করে দেখুন। এই ধরনের পিপে আকৃতির পাত্র আমরা কিন্তু অনেকেই অনেক সময়েই জলের ড্রাম হিসেবে ব্যবহার করেছি। মূলতঃ বিল্ডিং তৈরির সময়ে রাজমিস্ত্রিদের এই ধরনের পাত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়, ইট ভেজানো বা কংক্রিট বা বালি সিমেন্টের মশলা মাখানোর জন্য ব্যবহৃত জল রাখার জন্য।

এবার এই পোস্টের মূল বক্তব্যে আসি। এই পাত্রগুলি দিয়ে আমরা খুব সহজেই “গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল” বানিয়ে নিজেদের বাড়িঘরে বসাতে পারি। এজন্য প্রথমে এই পাত্রগুলিকে ছবির মত করে “perforated” বা ছিদ্রযুক্ত করে নিতে হবে। এর পর মাটিতে মোটামুটি ৪’× ৪’ (চার ফুট বাই চার ফুট) আকারের একটি চৌকো জায়গায় মাটি খুঁড়ে গর্ত করে পাত্রটিকে এমনভাবে বসাতে হবে যাতে পাত্রটি মাটির তলায় মোটামুটি ন্যূনতম একফুট বা তার বেশি নিচে থাকে (আমরা পাত্রটিকে আরো গভীরেও বসাতে পারি, যত বেশি গভীর করা যায় ততই ভাল)। এবার পাত্রটির চারপাশে বালি এবং ইট ভাঙা খোয়া দিয়ে ভরাট করে দিন।

গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল
গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল

এরপর আসে আসল কাজ। বাড়ির ছাদের জল যে রেন ওয়াটার পাইপগুলির মাধ্যমে নেমে আসে সেগুলোকে একটি একটি করে বা একসাথে দু’তিনটিকে জুড়ে সেই পাইপলাইন ছবির মত করে সরাসরি এনে এই রিচার্জ ওয়েলে যুক্ত করে দিন। পাইপলাইন মাটির নীচে দিয়ে আনাই ভাল তাতে নষ্ট হওয়ার বা ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। আমরা এভাবে প্রতিটি পাইপের জন্য আলাদা আলাদা রিচার্জ ওয়েল বসাতে পারি বা অনেকগুলিকে জুড়েও একটি ওয়েল বসাতে পারি। পাইপলাইন এই রিচার্জ ওয়েলগুলির সাথে জোড়া হয়ে গেলে এই পাত্রগুলির ওপরে ইট ভাঙা খোয়া দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। ব্যস আপনার কাজ শেষ।

গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল
গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল

এই ধরণের রিচার্জ ওয়েল থেকে আমরা বছরে কয়েক হাজার লিটার জল ভূগর্ভস্থ জলস্তরে রিচার্জ করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে গড় বৃষ্টিপাতের হিসেবে, ১০০০ বর্গফুট ছাদবিশিষ্ট একটি বাড়ি থেকে আমরা বছরে প্রায় ১১৪ ঘনমিটার (অর্থাৎ ১,১৪০০০ লিটার জল) যা চারজনের পরিবারের প্রায় ১০৫ দিনের যাবতীয় জল খরচের সমপরিমাণ (২৭০ লিটার মাথাপিছু প্রতিদিনের হিসেবে) জল আবার ভূগর্ভস্থ জলস্তরে ফিরিয়ে দিতে পারি। আর এই কাজের জন্য আমাদের খরচ হতে পারে সব মিলিয়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার মত।

গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল
গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ওয়েল

আর এই পরিমাণ জল যদি কিনে ব্যবহার করতে যান তাহলে খরচ?

আমি বলব না। অনেকেই আজকাল ২০ লিটারের জারের জল কিনে খান। খুব কম করে হলেও মোটামুটি যদি ১ টাকা/ লিটার হিসেবেও জল কেনেন (প্রসঙ্গত, এক লিটারের একটি জলের বোতল বর্তমানে ন্যূনতম ১৫ টাকায় বিক্রি হয়, আর চেন্নাই এবং মহারাষ্ট্রে বর্তমানে এক লিটার জল ২০০ টাকার আশেপাশে দামে বিক্রি হচ্ছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পেলাম) তাহলে বছরে কত টাকা খরচ করতে হবে সেই হিসাবটা আপনারাই করে নিতে পারবেন। আর নিজেদের পকেটের টাকা খরচের ব্যাপারে, আমাদের আম জনতার চেয়ে বড় ব্যবসায়ী কেউ নেই।

সুতরাং, সুধীজন এই পর্যন্তই থাক। আপনারা হিসেব কষে দেখতে থাকুন।

লেখকঃ আশুতোষ দত্ত (Assistant Engineer, Irrigation & Waterways Department, Govt. of West Bengal)

Content Protection by DMCA.com
এখান থেকে শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
error: মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত