বিশ্বের বৃহত্তম বাঘ আবাস – ভারত
World’s Largest Tiger Habitat
‘सरेजँहासे अच्छा’ ভারত ভূমি এক অনন্য বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক ক্ষেত্র I একটি মহাদেশের যাবতীয় বৈশিষ্টের ক্ষুদ্র সঙ্কলন ভারতভূমিকে উপমহাদেশে নামেও অভিহিত করা হয় তা আমরা সকলেই জানি I এইরকম একটি ঐকান্তিক ছবি আজ আমরা জেনেনেবো আমাদের দেশের ঐতিহ্য থেকে I ভারত একাধারে জীববৈচিত্র্য ও পশু সংরক্ষণে বর্তমান বিশ্বে অন্যতম প্রথম সারির দেশ I এদেশের বৈচিত্রপূর্ণ পশু সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম হল বাঘ যা আমাদের জাতীয় পশু হিসাবে বর্তমানে স্বীকৃত I বর্তমানে (2014 এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী) সমগ্র পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা 3,890 (প্রায়) টি যেখানে ভারতে রয়েছে 2,226 টি I সমগ্র পৃথিবী বলতে দুই শতাধিক দেশের মধ্যে মাত্র 13 টি দেশে বাঘের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং এই দেশগুলিই CITIES এর সদস্য দেশ হিসাবে বাঘ সংরক্ষণে নিয়োজিত I এর মধ্যে ভারত বাঘ সংরক্ষণে প্রধান দেশ I শতাংশ অনুযায়ী বিশ্বের 70 শতাংশ বাঘ রয়েছে ভারতে I

বাঘ উৎপত্তির সাইবেরিয় তত্ব অনুযায়ী প্রায় 20 লক্ষ বছর পূর্বে এশিয়ার বাঘ সম্প্রদায় দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং একটি দল উত্তর-পশ্চিম দিকে বিচরিত হয়ে রাশিয়া হয়ে সাইবেরিয়াতে পৌঁছায় এবং অপর দলটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মালয়েশিয়া, বর্মা, ইন্দোনেশিয়া, সুমাত্রা হয়ে বালি থেকে কণ্যাকুমারীতে পৌঁছালে ভারতে বাঘের আবির্ভাব ঘটে I Kitchener ও Dugnore বিজ্ঞানীদ্বয়ের মতে প্রায় 12,000 বছর পূর্বে ভারতে বাঘের আবির্ভাব I বিশেষজ্ঞদের মতে 1900 সালের পূর্বে ঊনবিংশ শতকে প্রায় 40,000 বাঘ ভারতের বনভূমিতে বিচরণ করতো কিন্তু এই সময় চোরাকারবারীর লালসা এবং মানুষের শিকার প্রেমের তীব্র তাড়নায় বাঘ নিধন যজ্ঞের ফলে বাঘের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে কমতে থাকে I যার ফলস্বরূপ 1972 সালের বাঘ শুমারীতে 1872 টি বাঘের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় I অর্থাৎ কিছু পশু হন্তক লোভী ও নির্লিপ্ত মানুষের জন্য একটি বৃহৎ বাস্তুতন্ত্র প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রমে পৌঁছেছিল I এরূপ সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে ভারত মুক্তির আলোক উৎসের সন্ধান পায় 1969 সালে I

1969 সালে দিল্লিতে IUCN আয়োজিত ‘General Assembly Meeting in Dilhi’ তে বিভিন্ন প্রজাতির বিপন্ন প্রাণী সমন্ধে আলোচনা হয় এবং ভারত পশু সংরক্ষণে উৎসাহী হয় I এর ফলস্বরূপ 1970 সালে ভারতে বাঘ শিকার নিষিদ্ধ হয় এবং 1972 সালে ‘Willed Life Protection Act’ পাস হয় এবং বাঘ কে ‘জাতীয় পশু’র মর্যাদা প্রদান করা হয় (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে 1972 পর্যন্ত ভারতের জাতীয় পশু ছিল সিংহ) I ঐ বছরেই বাঘ শুমারী আরম্ভ হয় যা প্রতি চার বছর অন্তর চলে আসছে I 2010 সালের মার্চে কাতারের দোহা তে অনুষ্ঠিত 15th CITIES Conference এ অন্য 12 টি দেশের সাথে ভারত বাঘ সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় I এর পর থেকেই বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে I

1973 সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রা গান্ধীর সময়কালে ভারত সরকার ‘National Tiger Conservation Authority’ গঠণ করে এবং ঐ বছরই করবেট জাতীয় উদ্যান স্থাপিত হয় I 1990 এর দশকে ভারতে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় 3,500 তে যা 2006 এ কমে আসে 1400 তে I 2010 এ বাঘের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় 1700 তে I এর মধ্যে (2005) সাবিস্কা ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে বাঘ নির্মূল হয়ে যায় I উত্থান পতনের মধ্য দিয়েই বাঘের সংরক্ষণ চলতে থাকে এবং 2016 সালের 3rd Asian Ministerial Conference on Tiger Conservation এ মাননীয় প্রকাশ জাভড়েকর ঘোষণা করেন 2014 সালের বাঘ শুমারী অনুযায়ী ভারতে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় 2,226 এ যা বিশ্বের মোট (3,890 টি) বাঘের 70 শতাংশ (প্রসঙ্গত, 2010 সালের বাঘের নিরিখে ভারতে 2014 তে বাঘের সংখ্যা 30 শতাংশ বৃদ্ধি পায়) I অর্থাৎ বিশ্বের বৃহত্তম বাঘ আবাস হল ভারত I

বর্তমানে ভারতের 18 টি রাজ্যের 3,78,11,889 বর্গকিলোমিটার বনভূমির 71027.10 বর্গকিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে 50 টি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প রয়েছে I এখন জাতির কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হল পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বাঘ বৃদ্ধির এই গতিশীলতাকে অক্ষুন্ন রেখে বিশ্বের কাছে অদ্বিতীয় থাকা এবং দোহা সম্মেলনের প্রতিশ্রুতিকে বজায় রেখে জাতীয় পশুর মর্যাদা বৃদ্ধির পথ সুগম করা I এবার দেখাযাক 2018 সালের সর্বভারতীয় বাঘ শুমারী কি কথা বলে I
তথ্যসূত্রঃ Wikipedia, Indian Express, Times of India.
লেখকঃ গোপাল মণ্ডল (সহকারী সম্পাদক, মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া)