মৃত্তিকা ভূগোলের নির্বাচিত প্রশ্নোত্তর || পর্ব-২

★ মৃত্তিকা ভূগোল ★

(১) Soil Horizon কাকে বলে?
উত্তরঃ- মৃত্তিকার পৃষ্ঠদেশ থেকে নীচের দিকে মূল বা জনক শিলা স্তর পর্যন্ত প্রস্থচ্ছেদ করলে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে যে স্তরায়ন লক্ষ্য করা যায়, তাকে মৃত্তিকা পরিলেখ বলে। মৃত্তিকা পরিলেখ-এর এক একটি স্তরকে সয়েল হরাইজন (Soil Horizon) বলে।

(২) Soil Monolith কাকে বলে?
উত্তরঃ- মৃত্তিকার প্রোফাইল গঠনের প্রাথমিক প্রস্তুত পর্যায় হল সয়েল মনোলিথ। মৃত্তিকা চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব সর্বাধিক। বৈশিষ্ট্যঃ- (i) ইহা এক পাতলা বিশেষ স্তর সৃষ্টি করে। (ii) স্তরটির গভীরতা হয় ২.৫ সেমি বা তারও কম।

(৩) সোলাম (Solum) কাকে বলে?
উত্তরঃ- এককথায়, মৃত্তিকার দুটি প্রধান স্তর A ও B কে একত্রে সোলাম বলে। মৃত্তিকার A ও B স্তরে মৃত্তিকা গঠনের সকল প্রক্রিয়া সক্রিয় থাকে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব সীমাবদ্ধ থাকে এরূপ নরম শিথিল, ঝুরঝুরে ও হিউমাস সমৃদ্ধ স্তরকে সোলাম বলে।

(৪) প্যান (Pan) কাকে বলে?
উত্তরঃ- সাধারনত মৃত্তিকার যে স্তর ঘন এবং জল যেখানে সহজে প্রবেশ করতে পারে না তাকে প্যান বলে। মূলত সঞ্চয়ন স্তর বা B স্তরের নীচে ইহা গঠিত হয়। প্যান তিন প্রকারের যথা — (i) কাদা প্যানঃ- অত্যধিক কাদাযুক্ত অপ্রবেশ্য স্তর (ii) অনিবিড় প্যানঃ- পলি ও বালিকণা সমৃদ্ধ স্তর (iii) নিবিড় প্যানঃ- লৌহ অক্সাইড, সিলিকা ক্যালসিয়াম কার্বনেট গঠিত স্তর।

(৫) Motteled Zone কাকে বলে?
উত্তরঃ- ল্যাটেরাইট মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে বিশেষত ক্রান্তীয় আর্দ্র জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে ধৌত প্রক্রিয়ার ফলে লৌহ অক্সাইড সমৃদ্ধ শক্ত ও জমাটবদ্ধ স্তরটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উন্মুক্ত অবস্থায় অবস্থান করলে, তাকে Mottled Zone বলে। এটি হল একটি লৌহ সমৃদ্ধ অঞ্চল যা থেকে আয়রন স্টোন উৎপন্ন হয়। প্যালিড অঞ্চলের উপর ছোপযুক্ত এই অঞ্চলটি অবস্থান করে।

(৬) স্থানান্তরিত বা পরিবাহিত মৃত্তিকা কাকে বলে?
উত্তরঃ- জনক শিলা থেকে উৎপন্ন মৃত্তিকা যখন নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ বা মহাকর্ষজনিত কারণ প্রভৃতি প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়ে পুঞ্জীভূত বা সঞ্চিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী মৃত্তিকার উদ্ভব ঘটালে, তখন তাকে স্থানান্তরিত বা পরিবাহিত মৃত্তিকা বলে। যেমন — সূক্ষ লোয়েস কণা গোবি থেকে পরিবাহিত হয়ে চীনে নদী সমভূমি অঞ্চলে নতুন ধরনের মৃত্তিকা গঠন করে।

(৭) গিলগাই (Gilgai) কাকে বলে?
উত্তরঃ- আর্দ্রতার পার্থক্যের ফলে মৃত্তিকাতে সংকোচন বা প্রসারণ ঘটে। ভেজা অবস্থায় কাদাকণার ল্যাটিকের মধ্যে জল ঢুকলে মৃত্তিকা ফুলে ওঠে। কৃষ্ণমৃত্তিকা অঞ্চলে এই পদ্ধতিতে কৃষ্ণমৃত্তিকার কাদাকণাগুলি স্ফীত হয়ে মৃত্তিকার উপরের স্তরে যে বন্ধুর ভূভাগের সৃষ্টি করে, তাকে গিলগাই বলে। হিউমাসের উপস্থিতির উপর কাদাকণার এরূপ স্ফীতিধর্ম নির্ভরশীল।

(৮) আদি বা জনক শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি?
উত্তরঃ- আদি বা জনক শিলার বৈশিষ্ট্য — (i) জনক শিলা খনিজ, অজৈব বা জৈব পদার্থ অথবা উভয়ের মিশ্রণে গঠিত হয়। (ii) মৃত্তিকার গ্রথন, গঠন, রাসায়নিক ধর্ম নির্ধারিত হয় জনক শিলা থেকে। (iii) আদিশিলা আবহবিকার জনিত কারণে প্রভাবিত হয়। (iv) মৃত্তিকা গঠনে অংশগ্রহণকারী শিলা অতি ক্ষারকীয়, ক্ষারকীয়, আম্লিক, কার্বনেট প্রভৃতি প্রকৃতির হয়ে থাকে।

(৯) অবশিষ্ট মৃত্তিকা কাকে বলে?
উত্তরঃ- আবহবিকার জনিত কারণে জনকশিলা থেকে উৎপন্ন মৃত্তিকা যদি প্রাকৃতিক বিভিন্ন শক্তি দ্বারা অন্যত্র বাহিত না হয়ে উৎস স্থলেই বিকশিত হয়ে নিশ্চল অবস্থায় অবস্থান করে, তবে তখন সেই মৃত্তিকাকে অবশিষ্ট মৃত্তিকা বলে। অবশিষ্ট মৃত্তিকাস্তর খনন করলে জনক শিলার অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। যেমন – দাক্ষিণাত্যের ব্যাসল্ট সমৃদ্ধ কৃষ্ণমৃত্তিকা স্তর।

(১০) অপরিণত বা অসম্পূর্ণ মৃত্তিকা কাকে বলে ?
উত্তরঃ- জনক শিলা থেকে মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াকালে পর্যাপ্ত সময় ও শিলা অবস্করের অভাবে যদি মৃত্তিকা পরিলেখের প্রধান তিনটি (A, B, C) স্তরের কোন একটি গঠিত না হয় তবে তখন সেই মাটিকে অপরিণত মৃত্তিকা বলে। ইহা তিন প্রকারের, যথা – (i) লিথোসোল (পার্বত্যাঞ্চলের) (ii) রেগোসোল (বাহিত) এবং (iii) পলি মাটি। উত্তর আমেরিকার ল্যাব্রাডর মালভূমি, বিভিন্ন মরুভূমি; উপকূল ও নদনদী উপত্যকা অংশে এরূপ মাটির প্রাধান্য দেখা যায়।

(১১) রেগোলিথ (Regolith) কাকে বলে ?
উত্তরঃ- আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট যাবতীয় বস্তুভারের অসমৃদ্ধ স্তরকে বলা হয় রেগোলিথ। অর্থাৎ রেগোলিথ একপ্রকার জৈবপদার্থ বিহীন শিথিল স্তর, যা ভূপৃষ্ঠের ওপর অবস্থান করে। সাধারণত ক্রান্তীয় অঞ্চলে আবহবিকারের ফলে ইহা গঠিত হয়।

(১২) আদর্শ বা সম্পূর্ণ মৃত্তিকা কাকে বলে?
উত্তরঃ- জনকশিলা থেকে মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রক্রিয়াকালে পর্যাপ্ত সময় ও মৃত্তিকার প্রভাব এবং জলবায়ুর সামঞ্জস্যতার মাধ্যমে যখন ধীর পদক্ষেপে মৃত্তিকা পরিলেখের A, B, C এই তিনটি স্তর গঠনের মাধ্যমে মৃত্তিকা গঠিত হয়, তখন তাকে আদর্শ বা সম্পূর্ণ মৃত্তিকা বলে। যেমন — পডজল, চারনোজেম, ল্যাটেরাইট এরূপ মৃত্তিকার উদাহরণ।

(১৩) পেড (Ped) কাকে বলে ?
উত্তরঃ- প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো দ্বারা সৃষ্ট মৃত্তিকা গঠনের একটি সমষ্টিগত প্রিজমাকার, ব্লক বা চাঁইয়ের মতো দানাবদ্ধ একককে পেড বলে। বৈশিষ্ট্যঃ- (i) ইহা মৃত্তিকার কণা ও জৈব পদার্থ দ্বারা প্রাকৃতিক সংযোজনে গঠিত মৃত্তিকার ত্রিমাত্রিক অংশ। (ii) মৃত্তিকার কাদাকণা, হিউমাস প্রভৃতিকে আটকে রাখে ও মৃত্তিকা গঠনে সাহায্য করে। ১৯৬০ সালে US Soil Survey মৃত্তিকার এরূপ এককের পেড নামকরণ করে।

(১৪) পেডন (Pedon) কাকে বলে?
উত্তরঃ- প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলো দ্বারা সৃষ্ট আলাদা স্বত্ত্বা বিশিষ্ট মৃত্তিকা গঠনের ত্রিমাত্রিক একককে পেডন বলে। এই এককটির প্রধান বৈশিষ্ট হল — (i) এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা থাকে। (ii) ইহা সংবদ্ধ, প্রিজমাকার বা স্তম্ভাকার গঠনের একক। (iii) সাধারণত এককগুলি ১ থেকে ১০ বর্গমিটার আয়তনের হয়। (iv) এর বিস্তার মৃত্তিকার হরাইজন গুলির শেষ সীমানা পর্যন্ত।

(১৫) এপিপেডন (Epipedon) কাকে বলে?
উত্তরঃ- মৃত্তিকা হরাইজনের উপরের স্তরে বা পেডনের উপরে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ স্তরটিকে বিশেষত ভূপৃষ্ঠ থেকে পরিলেখের প্রথম স্তরটির ত্রিমাত্রিক রূপকে এপিপেডন বলে। বৈশিষ্ট্যঃ- (i) এই স্তরে গাছপালা জন্মে ও কৃষিকাজ সম্পাদন হয়। (ii) জৈব পদার্থের পচনের মাধ্যমে হিউমাস গঠিত হয়। (iii) এর অনুভূমিক বিস্তার পেডনের সমান কিন্তু গভীরতা খুবই কম। (iv) ইহা মৃত্তিকার উর্বর অংশ, রং কালো থেকে বাদামী।

মৃত্তিকা ভূগোলের নির্বাচিত প্রশ্নোত্তর || পর্ব-১ :- Click Here

(১৬) পলিপেডন (Polypedon) কাকে বলে ?
উত্তরঃ- মৃত্তিকা গঠনের অন্যতম একক পেডন। যখন অনেকগুলি পেডন একসাথে দলবদ্ধভাবে অবস্থান করে তখন তাকে পলিপেডন বলে। বৈশিষ্ট্যঃ- (i) পলিপেডনগুলি আয়তনে বেশ বড় এবং এর কোন ঊর্ধ্বসীমা নেই। (ii) মৃত্তিকার গুণাবলীর বিশ্লেষণ ও শ্রেণীবিভাগে একক রূপে কাজ করে। (iii) মৃত্তিকার মানচিত্রায়নে ব্যবহৃত হয়। (iv) এক একটি পলিপেডন মৃত্তিকার কিছু বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের সন্ধান দেয়।

(১৭) মৃত্তিকা ভৌত ধর্মগুলি কি কি?
উত্তরঃ- মৃত্তিকার ভৌত ধর্মগুলি হল — (i) মৃত্তিকার গ্রথন (ii) মৃত্তিকার গঠন (iii) মৃত্তিকার বর্ণ বা রং (iv) আপেক্ষিক গুরুত্ব (v) মৃত্তিকার রন্ধ্র পরিসর ও সছিদ্রতা (vi) মৃত্তিকার সংহতি (vii) জলধারণ ক্ষমতা (viii) সংকোচন ও স্ফীতি (ix) জল ও আর্দ্রতা (x) তাপমাত্রা (xi) মৃত্তিকাস্থিত বায়ু (xii) মৃত্তিকার ঘনত্ব ইত্যাদি।

(১৮) মৃত্তিকার রাসায়নিক ধর্মগুলি কি কি?
উত্তরঃ- মৃত্তিকার রাসায়নিক ধর্মগুলি হল — (i) মৃত্তিকার বিক্রিয়া (ii) আয়ন বিনিময় ক্ষমতা (iii) জৈব পদার্থ (iv) মৃত্তিকাতে কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত (v) পুষ্টি মৌল (vi) মৃত্তিকার কলয়েড গঠন ও কর্দম খনিজ ইত্যাদি।

(১৯) মৃত্তিকার গঠন বা মৃত্তিকা সংযুক্তি বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ- মৃত্তিকার গঠন হল মৃত্তিকার একটি অন্যতম ভৌত বৈশিষ্ট্য। মৃত্তিকাস্থিত কাদা, বালি, পলি প্রভৃতি বিভিন্ন আয়তনের কণা সমষ্টির বিন্যাস বা সজ্জিতকরণকে মৃত্তিকার গঠন বা সংযুক্তি বলে। মৃত্তিকার গঠনপ্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। এর অন্যতম দুটি পর্যায় হল — (i) জৈব পদার্থ ও কাদাকণার সংসক্তির ঝোঁকের ফলে মৃত্তিকার জৈব ও খনিজ কণাগুলির সংযুক্তি (ii) উৎপন্ন গঠনগত এককগুলির জৈবপদার্থ থেকে তৈরী আঠালো পদার্থের আবরণ তৈরীর মাধ্যমে দৃঢ়তা প্রদান।

(২০) মৃত্তিকার গ্রথন কাকে বলে?
উত্তরঃ- মৃত্তিকাস্থিত বিভিন্ন আয়তনের কণা (যেমন – পলি বালি, কাদা প্রভৃতি) গুলির আপেক্ষিক অনুপাতকে মৃত্তিকার গ্রথন বলে। আবার, মৃত্তিকাতে ২ মিলিমিটার ব্যাসের কম আয়তনের খনিজ কণার অনুপাতকেও মৃত্তিকার গ্রথন বলে। মৃত্তিকার গ্রথন মৃত্তিকার বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতিকে প্রভাবিত করে। অনুভব ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে মৃত্তিকা গ্রথনের শ্রেণীবিভাগ করা যায়।

(২১) মৃত্তিকা গঠনের শ্রেণীবিভাগ কিরূপ?
উত্তরঃ- বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মৃত্তিকা গঠনের শ্রেণীবিভাগ করা যায়, যেমন — (১) আকৃতি অনুসারেঃ- (i) প্লেট বা থালা আকৃতির (ii) প্রিজমের মতো (বহুতল বিশিষ্ট, গোলাকার) (iii) চাঁই বা ব্লকরূপী (ঘনকরূপী ও উপকোণরূপী) (iv) দানাদার গঠন (সচ্ছিদ্র ও অতি সচ্ছিদ্র) ; (২) কাঠিন্য অনুসারেঃ- (i) কঠিন বা দৃঢ় (ii) নমনীয় ; (৩) আয়তন অনুসারেঃ- অতি সূক্ষ্ম, সূক্ষ্ম, মাঝারি, স্থূল, অতি স্থূল (৪) স্থায়িত্ব অনুসারে (৫) সংবদ্ধতা অনুসারে (৬) গঠনহীন অবস্থা অনুসারে ইত্যাদি।

(২২) মৃত্তিকার জল কি ?
উত্তরঃ- ভূপৃষ্ঠের জল যখন আকর্ষণকারী বল, কৌশিক বল, সংসক্তি ও আসঞ্জন বল দ্বারা জলের নিম্ন গতির জন্য মৃত্তিকা কণার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রন্ধ্রের মধ্যে প্রবেশ করে আবদ্ধ থাকে, তখন তাকে মৃত্তিকার জল বলে। ব্রিগস্ (১৮৭৭) মাটির জলকে — (i) মুক্ত বা মহাকর্ষীয় জল (ii) শোষিত বা আকর্ষিত জল (iii) কৈশিক জল (iv) মৃত্তিকার জলীয়বাষ্প (v) সংযুক্ত জল — এই পাঁচটি ভাগে ভাগ করেন।

(২৩) মুক্ত বা মহাকর্ষীয় জল কাকে বলে?
উত্তরঃ- মৃত্তিকাতে বৃষ্টির জল পতিত হলে বা সেচের জল দিলে, ওই জলের যে অংশ মহাকর্ষ শক্তির টানে মৃত্তিকার নিম্নস্থিত ভৌমজলের সাথে মিলিত হয়, তাকে মুক্ত বা মহাকর্ষীয় জল বলে। এই জল মৃত্তিকার গ্রথন, গঠন, উষ্ণতা প্রভৃতির উপর নির্ভরশীল। এই জলের মাধ্যমে অনেক উদ্ভিদ খাদ্য নষ্ট হয় এবং এই জল কৃষিকাজের অনুপযোগী।

(২৪) কৈশিক জল কাকে বলে?
উত্তরঃ- পৃষ্ঠটান ও জলকণাগুলির পারস্পরিক আকর্ষণের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের জল যখন কৈশিক নলে প্রবেশ করে মাটি কণার আকর্ষণকারী শক্তির প্রভাবে আবদ্ধ হয়ে অবস্থান করে, তখন তাকে কৈশিক জল বলে। উদ্ভিদ এই কৈশিক জল শোষন করে জৈবিক ক্রিয়া সম্পন্ন করে। কৈশিক জলের পরিমাণ মৃত্তিকার গ্রথন, গঠন, জৈব পদার্থের পরিমাণ প্রভৃতির উপর নির্ভরশীল।

(২৫) শোষিত বা আকর্ষিত জল কাকে বলে?
উত্তরঃ- মৃত্তিকা ও জৈব পদার্থের কণাগুলোর চারপাশে জলের যে পাতলা আবরণ থাকে, অর্থাৎ মৃত্তিকাকণার পৃষ্ঠীয় আকর্ষণ শক্তির মাধ্যমে যে জল আবদ্ধ থাকে, তাকে অকর্ষিত জল বলে। এই জলের আবরণের ঘনত্ব ৪-৫ µ বা ০.০০১ mm। সংশক্তি ও আসঞ্জন বল দ্বারা এই জল মৃত্তিকাকণায় দৃঢ় ভাবে আবদ্ধ থাকায় উদ্ভিদ শোষণ করতে পারে না।

(২৬) মৃত্তিকা জলের গুরুত্ব কি?
উত্তরঃ- মৃত্তিকা জলের গুরুত্বগুলি হল — (i) মৃত্তিকা জল চিরন্তন দ্রাবক হিসেবে উদ্ভিদকে পুষ্টিমৌল ও খনিজ পদার্থ সরবরাহ করে (ii) উদ্ভিদের অঙ্কুরোদগম, বৃদ্ধি ও ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে (iii) আবহবিকার, ক্ষয়ীভবন প্রভৃতিকে প্রভাবিত করে (iv) মৃত্তিকার সুষম গঠন ও গ্রথনে সাহায্য করে (v) মৃত্তিকার পরিণত পরিলেখ গঠনে সাহায্য করে (vi) মৃত্তিকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি।

(২৭) রন্ধ্রপরিসর (Pore Space) কাকে বলে?
উত্তরঃ- মৃত্তিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌত বৈশিষ্ট্য হল রন্ধ্র পরিসর। মৃত্তিকার যে অংশ জল ও বায়ু দ্বারা পূর্ণ থাকে, তাকে মৃত্তিকার রন্ধ্র পরিসর বা ছিদ্র বলে। মৃত্তিকার গ্রথন, গঠন প্রভৃতির উপর এই রন্ধ্র পরিসর নির্ভর করে। বিভিন্ন গ্রথনের মৃত্তিকাতে রন্ধ্র পরিসর বা ছিদ্রের পরিমাণ ভিন্ন, যেমন – বেলে মৃত্তিকাতে ৩০%, ভারী এঁটেল মৃত্তিকাতে ৬৬%। মৃত্তিকা রন্ধ্রকে অকৈশিক ও কৈশিক এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

(২৮) মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ- মৃত্তিকার মোট আয়তনের প্রায় ৫% জৈব পদার্থ দিয়ে তৈরী যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌত বৈশিষ্ট্য। ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যুর পর মৃত্তিকায় অবস্থিত লক্ষ লক্ষ জীবাণু ও অন্যান্য ক্ষুদ্রাকৃতি প্রাণী দ্বারা বিয়োজিত হয়ে হিউমাস গঠনের মাধ্যমে জৈব পদার্থ সৃষ্টি করে। পরিবেশে বিভিন্ন কারণে এই জৈব পদার্থের হারের পার্থক্য হয়। যেমন – তৃণভূমি অঞ্চলে এর পরিমাণ ১০-১৫%, আবান মরু ও তুন্দ্রা অঞ্চলে এর পরিমাণ খুব কম বা শূন্য। এই জৈব উপাদান দুই শ্রেণীর হয় যথা — (i) আংশিক বিশ্লেষিত (ii) সম্পূর্ণ বিশ্লেষিত বা হিউমাস।

(২৯) মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের গুরুত্ব কি?
উত্তরঃ- মৃত্তিকার জৈব পদার্থ বিভিন্ন ধরনের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মকে প্রভাবিত করে। যেমন – (i) মৃত্তিকার ভৌত অবস্থাকে উন্নত করে (ii) মৃত্তিকার স্বছিদ্রতাকে নিয়ন্ত্রণ করে (iii) মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে (iv) অনেক খাদ্য উপাদানকে জৈব পদার্থ জটিল ও দ্রবণীয় অবস্থায় রাখে (v) জীবাণুদের খাদ্য জোগায় (vi) মৃত্তিকার উর্বরতা বৃদ্ধি করে (vii) জৈব মালচিং এর মাধ্যমে আর্দ্রতা সংরক্ষিত রাখে ইত্যাদি।

(৩০) মৃত্তিকার pH বলতে কি বোঝ ?
উত্তরঃ- যে স্কেল বা পরিমাপের সাহায্যে কোনো দ্রবণের হাইড্রোজেন আয়নের (H+) পরিমাণ প্রকাশ করা হয় তাকে pH বলে। ‘Pondus’ = ‘ওজন’ নামক ল্যাটিন শব্দের অাদ্যক্ষর P ও হাইড্রোজেন আয়নের আদ্যক্ষর H এর সমন্বয়ে এই শব্দটি গঠিত। মৃত্তিকার অম্লতা ও ক্ষারকীয়তা প্রকাশের জন্য ইহা ব্যবহৃত হয়। মৃত্তিকাতে pH ৭.০ হলে তা প্রশম, ৭.০ এর কম হলে তা অম্ল এবং ৭.০ এর বেশী হলে তা ক্ষারকীয় মৃত্তিকা হিসেবে গণ্য করা হয়।

সংকলনেঃ- গোপল মন্ডল (চৌবাট্টা, বাঁকুড়া)
[সহকারী সম্পাদক, মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া]
©Mission Geography India

মৃত্তিকা ভূগোলের নির্বাচিত প্রশ্নোত্তর || পর্ব-১ :- Click Here

Content Protection by DMCA.com
এখান থেকে শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
error: মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত