ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ (Mayurjharna Elephant Reserve)

ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ (Mayurjharna Elephant Reserve) হল পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের একটি এলিফ্যান্ট রিজার্ভ। পশ্চিমবঙ্গে যে দুটি ‘এলিফ্যান্ট রিজার্ভ’ রয়েছে, তার একটি হল ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ (অপরটি হল পূর্ব ডুয়ার্স এলিফ্যান্ট রিজার্ভ)। এই সংরক্ষিত এলাকাটি ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায় অবস্থিত। ঝাড়গ্রাম জেলার অরণ্যসংকুল ময়ূরঝর্ণা অঞ্চলের নামেই এই এলিফ্যান্ট রিজার্ভের নামকরণ করা হয়েছে। এরাজ্যের জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার ত্রিসীমানায় অবস্থিত এই অরণ্য অঞ্চলকে ২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এলিফ্যান্ট রিজার্ভ ঘোষণা করে। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত ‘প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট’ প্রকল্পের অন্তর্গত এই রিজার্ভের আয়তন ৪১৪.০৬ বর্গকিমি এবং সংলগ্ন ১৪৩৬ বর্গকিমি অঞ্চলকে এই রিজার্ভের ‘প্রভাবিত অঞ্চল’ (Zone of Influence) ঘোষণা করা হয়েছে। এই এলিফ্যান্ট রিজার্ভের সীমানা নির্ধারিত হয় — পূর্বদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় ও শালবনী ব্লক ; পশ্চিমদিকে ঝাড়খন্ডের দলমা হাতি সংরক্ষণ কেন্দ্র ; উত্তর দিকে পুরুলিয়ার মানবাজার ব্লক, বাঁকুড়ার সিমলাপাল, তালডাংরা ও খাতড়া ব্লক এবং দক্ষিণ দিকে ঝাড়গ্রামের বিনপুর-১, বিনপুর-২ ব্লক, বাঁকুড়ার রাইপুর ব্লক। ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ পশ্চিমবঙ্গ বন দফতরের ঝাড়গ্রাম বিভাগের (পূর্বতন পশ্চিম মেদিনীপুর বিভাগ) কাঁকড়াঝোর, ময়ূরঝর্ণা, বাঁশপাহাড়ি ও ভুলাভেদা বন ব্লক (১৩১.৫০ বর্গকিমি এলাকা) এবং কংসাবতী সয়েল কনজারভেশন বিভাগ-২-এর পোপো, বারুডি, কুইলাপাল (পি) ইত্যাদি বন ব্লক (৮৮.৫০ বর্গকিমি এলাকা), ঝাড়গ্রাম বিভাগের (পূর্বতন পশ্চিম মেদিনীপুর বিভাগ) শিয়ারবিন্দা, ওদলচুয়া, জলপুকুরিয়া ও বেলপাহাড়ি বন ব্লক (৬৪.৫৬ বর্গকিমি এলাকা) এবং কংসাবতী সয়েল কনজারভেশন বিভাগ-২-এর কুইলাপাল (পি), নান্না, ধাদকা ও কুচিপাড়া বন ব্লক (৩৮ বর্গকিমি এলাকা) এবং বাঁকুড়া দক্ষিণ বিভাগের রানিবাঁধ, মটগোদা (পি) ছেঁদাপাথর ইত্যাদি বন ব্লক (৯১.৫০ বর্গকিমি এলাকা) নিয়ে গঠিত। ১৪৩৬ বর্গকিমি আয়তনের ‘প্রভাবিত অঞ্চল’- এর অন্তর্গত অরণ্য অঞ্চলগুলি হল — ঝাড়গ্রাম জেলার লালগড় ; পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আরাবাড়ি, নয়াবসাত, গোদাপিয়াশাল, গড়বেতা, হুমগড়, গোয়ালতোড় ; বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী, বিষ্ণুপুর, জয়পুর, মটগোদা, তালডাংরা, সারেঙ্গা।

এই রিজার্ভের হাতির সংখ্যা ১৯৮৭ সালে ছিল ৪৫-৪৭ টি। ২০০৫ সালে ৯৬ টি। ২০১০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ১১৮ টি। ২০১৭ সালের হাতি শুমারি অনুসারে, এই রিজার্ভে হাতির সংখ্যা ১৯৪ টি। ময়ূরঝর্না এলিফ্যান্ট রিজার্ভ গঠনের মূল কারণ হল — সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়ন। যাতে স্থায়ী বসবাসকারী এবং পরিযায়ী (মূলত ঝাড়খন্ডের দলমা অরণ্য থেকে আগত) হাতির দলকে ভাল ভাবে সংরক্ষণ করা যায়। সেই সঙ্গে মানুষ-হাতি সংঘাত কমানো যায়। এই অরণ্যে প্রধানত শাল, পিয়াল, কেন্দু, মহুয়া, সেগুন, শিমূল, পলাশ, সোনাঝুরি, শিরিষ, কুসুম, আকাশমণি প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায়। আর শুধু হাতি নয়, এ অরণ্যে প্রাণী বৈচিত্র্যও নেহাৎ কম নয়। শিয়াল, বাঁদর, হরিণ, ভালুক, হায়েনা, বন্য শূকর, খরগোশ, খাটাশ, বেজি, গোসাপ, অজগর সাপ, ময়ূর ও পেঁচা সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি প্রভৃতি দেখা যায়। এমনকি ২০১৮ সালে লালগড়ের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলেছিল, যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের হাতে বাঘটি মারা যায়। ময়ূরঝর্ণা এলিফ্যান্ট রিজার্ভের অন্তর্গত কাঁকড়াঝোর, বেলপাহাড়ি (ঝাড়গ্রাম জেলা) ; রানিবাঁধ (বাঁকুড়া জেলা) ; কুইলাপাল (পুরুলিয়া জেলা) প্রভৃতি অঞ্চলে প্রকৃতি ও অরণ্য কেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

লেখকঃ- অরিজিৎ সিংহ মহাপাত্র (পার্শ্বলা, বাঁকুড়া)
তথ্যসূত্রঃ- বনবিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ; হাতি শুমারি ২০১৭ ; আনন্দবাজার পত্রিকা
©মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া ও ভূগোলিকা-Bhugolika

Content Protection by DMCA.com
এখান থেকে শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js //pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
//pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
error: মিশন জিওগ্রাফি ইন্ডিয়া কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত